প্রকাশিত: ০৪/০৯/২০১৭ ৪:৪০ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৬ পিএম

বার্মার আরকানের সমস্যা সম্প্রতি একটি জাতিগত সমস্যার রূপ ধারন করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে এ সমস্যা লেগেই আছে। এখানে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বারবার মার খেয়ে যাচ্ছে, আসছে। এটা স্রেফ মার খাওয়া থেকে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, গুম পর্যায়ে চলে এসেছে, কয়েক যুগ হবে বটে! এখানে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্মই পাপ, এমন নিয়তি যুগযুগ ধরে! কিন্তু তারা মৌলিক অধিকারের দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হলেই রাষ্ট্র তাদেরকে সন্ত্রাসী অজুহাতে অমানসিক নির্যাতন শুরু করে । তারা সংখ্যালঘু মুসলিম বলেই বিশ্বসম্প্রদায় কিংবা বিশ্ব মোড়লরা নিশ্চুপ! রাষ্ট্রীয় অধিকার এদের জন্য নাই একেবারে। বিভিন্ন দেশ থেকে বিশ্ব মোড়লরা লোকদেখানো কিছু মানবাধিকার বূলি দিচ্ছে বটে! কিন্তু এতক্ষণে পথে, ঘাটে, রাস্তায়, রান্নাঘরে, বন-জঙ্গলে, এবং নাফনদীতে হাজার হাজার রোহিঙ্গার ক্ষতবিক্ষত দেহ পঁচে গলে পড়ে দুর্গন্ধ চড়াচ্ছে! একটি দেশে একটি সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বার্মা বিশ্বরেকর্ড করেছে! শান্তিতে নোবেল পাওয়া গণতন্ত্রের লেবাস পরিহিত অংসান সূচীর সম্প্রতিক কর্মকান্ড সামরিকজান্তা সরকারকে ও হার মানিয়েছে। যার কারনে এখন প্রশ্ন উঠেছে এমন অত্যাচারী, খুনি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কি করে শান্তিতে নোবেল পায়! আজ সামরিক জান্তার “মগেরমুল্লুক” এর রহস্যময় শাসনব্যবস্থায় বিশ্বসম্প্রদায় শঙ্কিত ! প্রশ্ন উঠেছে এদের খুঁটির জোর সম্পর্কে? বার্মা সরকারের এমন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তথা গণহত্যায় এখনো পর্যন্ত তাদের নুন্যতম অনুতপ্ত হতে দেখা যায়নি।

একেবারে সম্প্রতি বার্মার সরকারি বাহিনী ও মগেরা আরকানের সংখ্যালঘু মুসলিম নারী, পুরুষ, শিশু এমন কি হিন্দুদের ও ধরে ধরে পৈশাচিক কায়দায় নির্মম ভাবে খন্ডবিখন্ড করে হাজার হাজার লাশ বন জঙ্গলে,পথে ঘাটে, নাফনদীতে বাসিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে এবং উল্লাসিত হয়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে আয়মে জাহেলিয়াকে ও হার মানিয়ে দিয়েছে। ছেলের সামনে মাকে, ভাইয়ের সমনে বোনকে, পিতার সামনে কণ্যাকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষন, পরে হত্যার মহা আয়োজন ঘটে যাচ্ছে আরকানের মাঠিতে। সেখানে ২/১ বছরের শিশু ও বাদ যাচ্ছে না। খন্ডখন্ড করে হত্যাকান্ডের ছবি গণমাধ্যমে ফুটে উঠেছে। যা শিহরিয়ে উঠার মত অবস্থা! কি নির্মমতা, কি ভাগ্যের পরিহাস! বিশ্ব কোন মোড়ল এখনো বার্মা সরকারকে বাধ্য করতে পারেনি যে, হিংস্রতা, গণহত্যা বন্ধ করতে! পারেনি সংখ্যালঘু এই মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের ন্যয্য মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া ব্যবস্থা করিতে ! ইদানিং শুধু বাঘের গর্জনে বিশ্বনেতারা বার্মায় গিয়ে ইদুঁরের মত ফিরে এসেছে, যা রহস্যময় ! বিশ্ব মাতব্বর গনের এহেন ব্যর্থতায় স্বজনপ্রীতির বড্ড প্রমান মিলেছে! তারা মাতব্বরি শুধু মুসলিম দেশে ভালই ব্যবহার জানে বটে!

১৯৭১ সনে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আরকানে অসংখ্য বাংলাদেশি স্বাধিনতাকামীরা আশ্রয়ে, আত্মগোপনে ছিল। তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, খেতে দিয়েছে। ভালবাসা সহ সব দিয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতা কি আমরা ভূলতে পারি? তাই বারবার তাদের বিপদ মহুর্তে স্বজাতি অসহায়, মজলুম রোহিঙ্গাদের আমাদের দারুন সীমাবদ্ধতার মাঝেও আশ্রয় দিয়েছি, খেতে দিয়েছি, পরতে দিয়েছি। মানবিকতা দেখিয়েছি। তাদের প্রতি বার্মার সরকারী বেসরকারি লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর নির্যাতন, নির্মমতা দেখিলে মনকে শান্ত রাখিতে পারিনা। তাই বারবার আশ্রয়ের দরজা আশ্রমে পরিণিত হয়েছে।স্মরণ রাখা দরকার- যে কোন বন্ধী হাতী, দীর্ঘ বন্ধী থাকতে থাকতে তাদের আসল শক্তি ভূলে গিয়ে মানুষ্য বোঝা বহন করে, মানুষ তাকে যখন তখন ব্যবহার করে! কথায় আছে, হাতী গর্তে পড়লে পিপঁড়া ও লাথি মারে! কিন্তু বন্ধী থাকতে থাকতে হিংস্র হাতী আজ স্বীয় শক্তি ভূলে গেছে। যার কারনে, যার তার লাথি খেতেই হবে বটে! তবে হাতীর শক্তি ভুক্তভোগীরাই সব জানে। আমি বলতে চাই যে, আরকান রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিমজাতি বারবার পিছু হটে রোহিঙ্গা হয়ে আর কতদিন থাকবে? তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি, সংগঠিত শক্তি, স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার আদায়ের শক্তি তো একত্রিত করে, আরকার ছেড়ে গোটা বার্মা দখলে নিতে কতক্ষণ? কিন্তু তাদের কোন প্রতিরোধ নাই, প্রতিবাদ নাই, তবে কিছু হলেই পালাবার পথ ঠিকই চিনে রেখেছে বটে ! দলেদলে চলে আসবে।আমার ছোট্ট দেশে আর কত আশ্রয় দেব? আর কত কৃতজ্ঞতা দেখাব?

একদিকে দেশে জনসংখ্যার বিশাল চাপ, অন্য দিকে অসহায় মেহমান। ঘরে চাল নাই, ডাল নাই, আমরা নিজেরা খেতে পারিনা, মেহমান নিয়ে আর কত? বড্ড জ্বালায় আছি! আমার তো ভাই আন্তরিকতার কমতি নাই, কত ভালবাসি যে তোমায়। কিন্তু আমি আজ নিজে ও অতিষ্ঠ! খুব বেশি অসহায়।চারপাশের পরিবেশ ও আজ বিপন্ন! তবু ও আমি পাষাণের মত পারিনা আশ্রয় দেয়া আশ্রমের রোহিঙ্গা স্বজাতিকে অাগুনে কিংবা সমুদ্রে নিক্ষেপে বিতাড়িত করিতে। খুব ভয় হয়! মন জ্বলে। তবে এর একটি স্থায়ী সামাধান দরকার আছে। এভাবে দেশ চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে! তাই আমার দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক ভাবে জাতিসংঘের মাধ্যমে বার্মাকে চাপে পেলে,বুদ্ধি খাটিয়ে সর্বদেশীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে তাদেরকে আরকানে স্থায়ী ভাবে স্ব-স্ব বাড়ীঘরে ফিরে যাবার ব্যবস্থা এখনই করা জরুরী হয়ে পড়েছে!

কুড়িয়ে পাওয়া অনেক সংবাদ আছে যে, আশ্রিত অনেক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফকে আরকানের অংশ মনে করে! যদিও তা তারা প্রকাশ করেনা। তারা কখনো ও বুঝতে চেষ্টা ও করেনা যে, এভাবে তো তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবেনা! পালিয়ে পালিয়ে কেউ স্বাধীনতা অর্জন করেনি, কিংবা করতে পারেনা। আর তারাও যে পারবেনা সেটা বুঝতে পারেনা, নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করে প্রশ্ন আছে। তাদের শুরু হতে পালিয়ে আসা মনোভাব এক ধরনের যে ভূল ছিল এবং যারা পালিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ আশ্রয়ে আছে, তারা স্বদেশে ফিরে গিয়ে প্রতিরোধে পাল্লা ভারী করিতে কখনো যায়নি! কিংবা যেতে চায়না। রহস্য বুঝা দায়! তারা বিড়ালের মত হয়ে হাজার বছর বাচাঁর স্বপ্ন দেখে কিন্তু কেউ এদের সিংহের মত একদিন বাচাঁর স্বপ্ন দেখায়না! তাদের সিংহের মত বাচাঁর স্বপ্ন দেখাবার দায়িত্ব যদি নেপথ্যে নেয়া যেত কিন্তু তত তাড়াতাড়ি হালাল ভাবে আপদ মুক্ত হত!

এটা ও যে, একটা বিশাল ভূল সিদ্ধান্ত তাদের সেটা দীর্ঘ বছর পর হলে ও তারা অনুশুচনা করবে এই ভূলের জন্য! ইতিমধ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে যে পরিমান লোক ইউরোপ সহ বিভিন্ন দেশে গেছে তাদের আয় ও যে এক ধরনের অর্থনৈতিক শক্তি সেটা কতটুকু,কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে তারাই ভাল জানে! কিন্তু তারা আমার বাংলাদেশে এভাবে আশ্রয়ে আশ্রমে রহস্যময় ভাবে বসে বসে যুগের পর যুগ কাটাইয়া দিবে? এতে দেশের জন্য হুমকি হবেনা? এরা আমার ভূখন্ড দীর্ঘ দিন দখলে থাকার জন্য স্বীয় মালিকানা দাবী করবে কি? দাবী উঠাবে বৈকি! এমন কি আশ্রিত এই রোহিঙ্গা স্বজাতি মেহমান একদিন ঠিকই বলবে বাংলার এই অংশ ও আরকানের অংশ! আমরা আমাদের দেশেই আছি! তখন আমাদের কিছু করার থাকবেনা! আমি নিশ্চিত বলতে পারি তখন বিশ্ব মোড়লরা তাদের পক্ষেই কথা বলবে! তাদের কথা না শুনলে মানবাধিকারের কথা বলে আমার দেশ আফগান, ইরাকের মত ভাগ্য করবে ! বিশ্ব মোড়লরা মুসলিম রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করিতে দ্রুত শক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত বটে।অন্য দেশে জিরো পারসেন।সব শেষ করে ২০ বছর পর সরি বলবে, এতেই সব দায় শেষ! তখন কপালে হাত রেখে আফসোস করা ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকবেনা !

তা ও না হলে , কেন তারা এমন ভাবে প্রতিরোধ বিহীন এখানে খেয়ে খেয়ে বসে আছে কিংবা বারবার পিছু হঠছে? তারা কি ভাবছে “কেউ” একদিন তাদের আরকান স্বাধীন করে দিবে? তাদের সমস্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করে দিবে? আর তারা গিয়ে সেখানে পুনরায় নতুন ভাবে বসতি স্থাপন করবে? নতুন স্বপ্ন বুনবে ইত্যাদি? তারা যদি অলস্য ভাবে বসে থাকে সেই স্বপ্ন যে, দিবাস্বপ্ন থেকে যাবে তাদের এই কথাটি বুঝাবে কে, তাদের এমন দুরসময়ে? কিন্তু আমার দেশ, বাংলাদেশ যদি যোগ্য পররাষ্ট্র নীতি প্রয়োগ করে তাদেরকে স্বদেশে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করিতে ব্যর্থ হয় আমাদের ভাগ্য তাদের মত হবেনা গ্যারান্টি দেবে কে? এই সুযোগে “মগেরমুলুকের শাসক” সীমান্তে স্থায়ী ঘাটি করে এদের মদদ দিয়ে স্বদেশ উদ্বারে এদের লেলিয়ে দেবেনা এমন গ্যারান্টি কি কর্তৃপক্ষ আমাদের দেবেন? তখন তো তারা তাদের মা, বোনের, স্ত্রী হত্যা, ধর্ষন, লুন্টন সব ভূলে স্বজাতির দিকে যুদ্ধ নামতে কতক্ষণ? কারন আমরা স্বীয় খাবারের প্লেইটে ও লাথি দিতে দ্বিধা করিনা! এই তো তারা বিধি লংঘন করে আমার ভূখন্ডে হেলিকেপ্টার মহড়া দিয়েছে, আমার সীমান্তরক্ষী লক্ষ করে অস্ত্র চালাইয়াছে! এমন দু:সাহস বার্মার কি করে হয়? উল্টো আমরা কি করলাম? আমরা আন্তর্জাতিক মোড়লদের এর জন্য বিচার দিলাম, কিন্তু প্রতিবাদ, প্রতিরোধবিহীন হয়তো তারা একদিন আমার ভূখন্ডে মা-বোনের ইজ্জত নিতে চলে আসবে! বেআইন যখন আইন হয়, তখন বাচাঁর জন্য কিছুকিছু আইন নিজের হাতে তুলে নিতে হয় বটে! তা না হলে যা হবার হয়েই যাবে! বিশ্ব মোড়লরা আমাদের পক্ষে নয়। তারা কখনো উদ্যোগী হয়ে সমস্যা সামাধান করে দিবেনা! যদি করত তাহলে ১০% রোহিঙ্গা কে হলেও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ভূমিকা রাখত!। মনে হচ্ছে তারা চোকে বলে চুরি কর, গিরছকে বলে সজাগ থাক, সেই নীতিতে আছে! তাহলে কি সামাধানের আশা জিরো পারসেন্ট! উত্তর হ্যাঁ।নিজের সমস্যা নিজে সামাধান করিতে না পারিলে আমরা ও আসন্ন হতে যাচ্ছি স্বদেশী রোহিঙ্গা! এমন প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যাবে, যদি রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত কার্যকর সামাধান না হয়!!

“সাইফুদ্দিন খালেদ”
এড়ভোকেট
জেলা ও দায়রা জজ আদালত, কক্সবাজার। ও কলামিস্ট, সাহিত্য কর্মী। মোবাইল : ০১৮১৯-৬২৪১২০

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব উখিয়া নিউজ- এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য উখিয়া নিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...